আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি। এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য— ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’।
এই বছর নারী দিবসের স্লোগানটি নির্বাচন করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে নারীকে অনুপ্রেরণা জোগাতে।
স্লোগানের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতিসংঘ বলছে, বর্তমানে আমাদের জীবন শক্তিশালী প্রযুক্তিগত একীকরণের উপর নির্ভর করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো কাজ যেমন প্রিয়জনকে কল করা, ব্যাংক লেনদেন করা বা একটি মেডিকেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা সবকিছু একটি ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ৩৭ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। পুরুষদের তুলনায় ২৫৯ মিলিয়ন নারীর ইন্টারনেটে কমপ্রবেশাধিকার রয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, যদি নারীরা ইন্টারনেটে ব্যবহার না করেন অথবা অনলাইনে নিরাপদ বোধ না করেন তবে তারা ডিজিটাল দুনিয়ায় জড়িত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবেন না, যা তাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত সম্পর্কিত পেশা অর্জনের সুযোগ হ্রাস করবে। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ চাকরি এই ক্ষেত্রগুলোর সাথে সম্পর্কিত হবে। ফলে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর কম পদচারনার কারণে উন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। তবে এ বছর ৮ মার্চ শবে বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তাই কর্মসূচিতেও কাটছাঁট করা হয়েছে। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর ৮ মার্চ যে আয়োজন থাকে তা অনুষ্ঠিত হবে ৯ মার্চ।
বেলা আড়াইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির যে প্রতিপাদ্য তা হলো- ‘ডিজিটাল বিশ্ব হোক সবার: নারীর অধিকার সুরক্ষায় ও সহিংসতা মোকাবিলায় চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন বৈষম্যহীন সৃজনশীল প্রযুক্তি।’
'নারীজন্ম ধন্য হোক আপনভাগ্য গড়ার অধিকারে’ স্লোগানে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘হেলেন কেলার’-এর বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছর দিবসের প্রথম প্রহরে মোমবাতি জ্বালিয়ে আঁধার ভাঙার শপথ নেয় `আমরাই পারি' জোট। ৮ মার্চ রাত ঠিক ১২টা বেজে এক মিনিটে শহীদ মিনারে সম্মিলিতভাবে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে এই শপথ নেওয়া হয়। তবে এ বছর এই কার্যক্রম হবে না। নারীপক্ষসহ ৫২টি সংগঠন দিবসটি পালন করবে ‘সন্তানের ওপর মায়ের অভিভাবকত্বের অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে। ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় রমনা পার্কের অরুণোদয় গেটের সামনে জমায়েত হয়ে শুরু হবে পদযাত্রা।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
উল্লেখ্য, এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে সেসময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারীশ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারীশ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নারী দিবস হচ্ছে সেই দিন, যেই দিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেবার দিন। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্বরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে।
আরএ