ঢাকা, ২৩ নভেম্বর ২০২২ : প্রায় তিন যুগ ধরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় সংস্কার ও কার্যকর সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) দাতা সংস্থাগুলো। সংস্থাগুলোর চাপের মুখে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংককে কোম্পানিতে রূপান্তরও করা হয়। ওই সময় একটি ব্যাংক সরকারি খাতে রেখে বাকিগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়েও আলোচনায় হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিতে রূপান্তর ছাড়া আর কোনো সংস্কার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় আসেনি। দীর্ঘ বিরতির পর এবার আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবে আবারো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্দশার বিষয়টি আলোচনায় এনেছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, কিছু সংস্কার ও সুশাসনের তাগিদের ফলে ২০০০ সাল-পরবর্তী দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক শৃঙ্খলায় উন্নতি হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ৪৬ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে কমে ২০১০ সালে তা ১১ শতাংশে নেমে এসেছিল। কিন্তু এরপর আবারো পথ হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।
গত এক যুগে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। হলমার্কের মতো বৃহৎ কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংকে সংঘটিত হয়েছে ক্রিসেন্ট, এননটেক্সের মতো বৃহৎ ঋণ জালিয়াতি। অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকেও ঘটেছে একের পর এক আর্থিক অপরাধ। সব মিলিয়ে গত এক যুগে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত দুর্বল হয়েছে। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকে আর্থিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হারও ২৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক—রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত এ পাঁচ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। একই সময়ে খেলাপি হওয়া ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা অবলোপন করেছিল এসব ব্যাংক। অবলোপনকৃত ঋণসহ এক যুগ আগে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক পাঁচটির অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সে হিসেবে গত এক যুগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষতের পরিমাণ বেড়েছে ৫৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগের কারণে গত দুই বছরে দেশের ব্যাংক খাত সীমাহীন নীতি ছাড় পেয়েছে। এ কারণে অন্য ব্যাংকগুলোর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষতও দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু এখন নীতি ছাড়ের মেয়াদ শেষ হতেই এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মূলধন ও সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণও। সরকারি ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি না থাকলে এ ব্যাংকগুলো অনেক আগেই দেউলিয়া হয়ে যেত।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং গত এক যুগে ব্যাংকগুলোয় অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় আগে ১০-২০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হতো। কিন্তু এখন ৫-১০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিশেষ শ্রেণী-পেশার লোকদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়ে গিয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই। একটি ব্যাংক রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত বাকি ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়াও হয়েছিল। কিন্তু সরকার নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বেসরকারীকরণ করেনি। সরকার আন্তরিক হলে এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী। ২০১০ সাল শেষে এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। ওই সময় সোনালী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। একই সময়ে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। কিন্তু গত এক যুগে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণও ছাড়িয়েছে ৬ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। গত এক যুগে সোনালী ব্যাংকে ১০ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার নতুন ক্ষত তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে এক হলমার্ক কেলেঙ্কারিতেই ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খুইয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। ২০১০ সাল-পরবর্তী দুই বছর সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ ব্যাংকটির বড় অনিয়মের মূল হোতা মনে করা হয় তাকে। ২০১২ সালে পদ হারানোর পর হুমায়ুন কবিরকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
২০১৯ সালের আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন বছর সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। এর আগে ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে তিন বছর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন তিনি। গত এক যুগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত আরো বেশি ভঙ্গুর হয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে আতাউর রহমান প্রধান বলেন, খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। দায়িত্ব পালন শেষে ব্যাংকটিকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে রেখে এসেছি। আর গত তিন বছর সোনালী ব্যাংক ক্রমোন্নতি করেছে। ২০১২ সালে এক হলমার্কের ঘটনায় রাতারাতি সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়ে গিয়েছিল।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত এক যুগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে জনতা ব্যাংক। ২০১০ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য ৫ হাজার ১৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপনও করেছে ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে গত এক যুগে জনতা ব্যাংকের ক্ষত দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকায়। ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ শতাংশ। বর্তমানে এ হার প্রায় ২৮ শতাংশ ছুঁয়েছে।
এক ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ তৈরি করেছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির বড় গ্রাহক এননটেক্স গ্রুপের ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এ দুই বৃহৎ ঋণ কেলেঙ্কারি ছাড়াও জনতা ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির মতো দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। ২০০৮-১৪ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ছিলেন এসএম আমিনুর রহমান। এরপর ব্যাংকটির এমডি পদে যোগ দেন আবদুস সালাম। জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিগুলোর সঙ্গে এ দুই শীর্ষ নির্বাহীর যোগসাজশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের বর্তমান এমডি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, বড় কিছু ঋণের কারণে জনতা ব্যাংক বিপদে পড়েছে। খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমাকে এ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ দেয়া হয়। শুরু থেকে ব্যাংকটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করছি। লিগ্যাসি হিসেবে পাওয়া বড় ঋণগুলো খেলাপি না হলে জনতা দেশের সেরা ব্যাংক হতে পারত।
গত এক যুগে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা ছিল বিতরণকৃত ঋণের ১৪ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১৯ শতাংশেরও বেশি খেলাপি। অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপনও করেছে। সব মিলিয়ে এক যুগে অগ্রণী ব্যাংকের ক্ষত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
২০১০ সালের এপ্রিলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন সৈয়দ আবদুল হামিদ। ব্যাংকটির প্রায় ৭৯২ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে অপসারণ করে। এরপর ব্যাংকটির এমডি নিয়োগ পান মো. শামস-উল ইসলাম। চলতি বছরের আগস্টে দুই মেয়াদের দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নেন তিনি। অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আবদুল হামিদের চেয়েও শামস-উল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের বেশি ক্ষতি করে গিয়েছেন। বড় ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটিকে তিনি আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিয়েছেন। দুই বছর পর অগ্রণীর পরিস্থিতি বেসিক ব্যাংকের চেয়েও খারাপ হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখে বেশ কষ্ট হয় বলে মন্তব্য করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত এক যুগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। কিন্তু কোনো একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। বরং ব্যাংকগুলো লুটে নেয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গুলশান-বনানী এলাকায় রাজকীয় জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ ইউরোপ-আমেরিকায় সম্পদ গড়েছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দেশের ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে।
আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সুশাসনের অভাবের কারণে ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর গৌরব ফেরাতে হলে সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে তদবির বা সুপারিশে ঋণ অনুমোদন। অপরাধ প্রমাণ হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এক যুগ আগে ২০১০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৭৯০ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশেরও বেশি। ২০১০ সালের মার্চ থেকে পরবর্তী ছয় বছর রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন এম ফরিদ উদ্দিন। তার মেয়াদে বিতরণ করা ঋণগুলো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে ভালো ব্যাংকের স্বীকৃতি ছিল বেসিক ব্যাংকের। কিন্তু ২০০৯ সাল-পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটি পথ হারিয়েছে। ২০১০ সাল শেষেও বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২৪ কোটি টাকা। ওই সময় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ শতাংশেরও কম। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫৯ শতাংশই খেলাপি। ব্যাংকটির তত্কালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠনের শিকার হয়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছিল ২০০৭ সালে। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ছিলেন ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বণিক বার্তাকে বলেন, লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চলার জন্যই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছিল। বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল দক্ষ ও যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালনা পর্ষদগুলোও পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি দৃশ্যমান হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি। পুনঃতফসিল ও মামলাভুক্ত ঋণগুলোও এক ধরনের খেলাপি ঋণ। এসব ঋণ আমলে নিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কয়েক গুণ বেশি হবে।
আরএ